সুমন সরদারঃ-
দিনদিন বগুড়া যেন ভয়ঙ্কর মৃত্যুপুরীতে রূপান্তরিত হচ্ছে। মাদকসেবী কিংবা মাদক ব্যবসায়ীদের হাতে, জমি-জমার বিরোধ নিয়ে, এমনকি তুচ্ছ ঘটনায় প্রাণ সংসয়ের ঘটনা ঘটছে। গত ৭/৮ মাসে খুনের ঘটনা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছেই। বিভিন্নভাবে খুনের ঘটনায় চরম আতংক আর সংশয় নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ উদ্বিগ্ন উৎকন্ঠায় দিন পার করছে।
গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে শহরের গোদারপাড়া এলাকায় রবিন (১৭) নামে এক স্কুলপড়ুয়া ছাত্রকে কয়েকজন মাদকাসক্তরা ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে।
অপরদিকে, গত ১ লা নভেম্বর বাড়ি থেকে আদালাতে যাওয়ার সময় দুর্বৃত্তের হাতে গুরুতর আহত শিক্ষানবিশ আইনজীবী আব্দুল বারী ওরফে চানমিয়া (৪০) মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে শনিবার পৌনে ১০ টায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়লেন।
বগুড়ার ভয়াবহ এ অবস্থার জন্য সচেতন মহল ও সুধীজনদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটছে, যাদের পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে। জামিনে বেরিয়ে এসেই নানা ধরনের হুমকি দিয়ে বুক ফুলে বীরদর্পে এলাকায় অপরাধ কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে। নির্দয় আর নৃশংসভাবে এসব হত্যাকান্ড হিংস্র পশুকেও হার মানায়। বিশেষ করে কিশোর অপরাধ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। উঠতি বয়সের তরুণরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। শহরের অলিগলি জুড়ে বাইকের দাপটের সাথে এদের বেপরোয়া জীবনাচারনের জন্য অভিভাবকদের পাশাপাশি এলাকার অনেকেই নির্ঘুম রাত পার হচ্ছে। মাদকাসক্ত আর মাদকের ভয়াবহ ছোবলে তরুণ-তরুণীরা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে ভীতিসঞ্চার হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
বগুড়ায় কয়েকমাসে ব্যাপক হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। এর আগে (গত ২৭ জুন) শহরতলীর ছোট কুমিড়া এলাকায় সিএনজি অটোরিকশার চালক লিটন শেখকে মাদকাসক্তরা কুপিয়ে হত্যা করে।
শহরতলীর ঝোপগাড়িতে ভ্যান চালক সাজু মিঁয়া (৫০) কে (গত ১৮ আগষ্ট) গলা কেটে হত্যা করে মাদকাসক্তরা। শহরের ভাটকান্দি এলাকায় টাইলস মিস্ত্রি ওয়াজেদ হোসেন ঝন্টু (৩০) কে হোটেলের মধ্যে তাঁর শিশু বাচ্চার সামনে কুপিয়ে হত্যা করে দূর্বৃত্তরা।
শহরতলীর ঘুনিয়াতলায় নয়ন হত্যার জের ধরে স্কুলছাত্র রবিন (২২) কে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে দূর্বৃত্তরা।
ব্যবসায়ী আঃ রাজ্জাককে সদেরর মহিষবাথান এলাকায় গুলি করে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। শাজাহানপুরে ফয়সাল ফাহিম (১৭) নামে স্কুল পড়ুয়া ছাত্রকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। একই উপজেলায় নওফেল শেখ (১৪) নামে স্কুল পড়ুয়া ছাত্রকে গলায় মাফলার পেচিয়ে হত্যা করা হয়। ছাগলে ঘাস খাওয়াকে কেন্দ্র করে অটো টেম্পু চালক আবু হানিফ (৪৫) কে গত ৩১ মে হত্যা করা হয়।
শুধু কি তাই, বাদ যায়নি ১০ বছরের শিশু সামিউল, তাকেও শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। সেলুন শ্রমিক শফিকুল ইসলাম (৩৮) কে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় শাকপালা এলাকায়। চককান পাড়া এলাকায় এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিয়ে বিতর্ক করতে গিয়ে জহুরুল নামে এক ব্যাক্তি জীবন দিতে হয়। সাবেক সেনা সদস্য জাকিরকে জিম্মি করে হত্যা করা হয়। জুয়া খেলার বিরোধ নিয়ে তেলিহারা এলাকায় গোপাল চন্দ্র দাসকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।
এছাড়াও সন্ত্রাসীদের হাতেই সন্ত্রাসীদের হত্যা কান্ড ঘটেছে কয়েকটি। তাঁরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা শেরপুরের মর্তুজা কাওসার হত্যাকান্ড, নন্দীগ্রামে আখের আলী হত্যাকান্ড, ধুনটে সুলতান আলীকে কুপিয়ে হত্যা। দুপচাঁচিয়াতে ব্যাটারি ছিনতাই করা দেখে ফেলায় হারুন ফকির (৪৫) কে গত ২৯ আগষ্ট হত্যা করা হয়। গাবতলিতে, আঃ রহিম (৩৫) নামে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে যুবক মামুন নিহত হয়। নিখোঁজের ৪ দিন পরে কিশোর অটোচালক আরিফের মরদেহ ধানক্ষেতে পাওয়া যায়। ধুনটে মিষ্টি বিতরণ ঘটনা পরবর্তীতে কাঠমিস্ত্রী আলমগীর হোসেনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়।
গত ২৮ জুলাই ঘুমন্ত অবস্থায় আগুনে পুড়িয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় আদমদীঘির গৃহবধূ শামিমাকে। রহস্যজনক মৃত্যুর সাড়ি তো রয়েছেই, সাহেব আলী হত্যাকান্ড, শিশু হুমাইরা, ট্রাকের হেলপার জোবায়ের, শিবগঞ্জে পল্লী বিদ্যুত কর্মী আঃ হান্নান। কাহালু, সারিয়াকান্দি, সান্তাহারসহ এমন কোন থানা এলাকা নেই যে জ্ঞাত/ অজ্ঞাত লাশ পুলিশ উদ্ধার করছে না।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রসাশন) ও সদ্য এসপি হায়দার আলী চৌধুরী, সনি বাংলা টিভির এই প্রতিবেদক আইনশৃংখলা পরিস্থতির অবনতি হচ্ছে কি? না জানতে চাইলে, তিনি বলেন এটি কোন স্টেটিক বিষয় নয়, এটা ডায়নামিক বিষয় কখনো খুব ভাল যায় আবার কখনো মাঝে মধ্যে সমস্যা হয়। অবৈধ অস্ত্র যদি কারও কাছে থেকে থাকে তা অবশ্যই ইনফরমেশন পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিভিন্নভাবে বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে অপরাধ সংঘটিত হয়। হত্যাকান্ডগুলো সংগঠিত হওয়ার সাথে সাথে জেলা পুলিশ এ্যাকশানে গিয়ে দোষীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনেছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য মাঠে কাজ করছে। মাদক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমাদের চলমান অভিযান অব্যাহত রয়েছে। হত্যাকান্ডের পাশাপাশি বাড়ছে সাইবার ক্রাইম। সামাজিকভাবে বাড়ছে অস্থিরতা। তবে সচেতন মহল মনে করে যে যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করলে কিছুটা সামাজিক অবক্ষয় কমতে পারে।