বিশেষ সংবাদ

বাংলাদেশের যে গ্রামের মানুষ ঘরের চাবি দিয়েছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে

ব্রিটেনের রানি যহন আমগর গ্রামে আসছিল, মনে হইছিল, যেমুন আসমানের পরীডা নাইমা আসছে। কী সুন্দর আছিন! ঘরের মানুষ হিসেবে ঘরের চাবি দিছিলাম তারে। হুনলাম, হেয় নাকি মারা গেছে। কিন্তু রানি কতা দিছিন (কথা দিয়েছিলেন), আবার আমগর গ্রামে আইব।’

ব্রিটেনের সদ্য প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে নিয়ে এই স্মৃতিচারণা করছিলেন অশীতিপর মোছা. সালেহা বেগম। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুরের বৈরাগীচালা গ্রামের বাসিন্দা। গ্রামটির ৫০ বছরের বেশি বয়সী বাসিন্দাদের অনেকেই রানি এলিজাবেথকে কাছ থেকে দেখেছেন। কারণ, ১৯৮৩ সালের ১৬ নভেম্বর বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সফরে এসে ‘স্বনির্ভর ও আদর্শ গ্রাম’ দেখতে শ্রীপুরের বৈরাগীরচালায় গিয়েছিলেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তাঁর সঙ্গে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও ছিলেন।

আজ শুক্রবার বৈরাগীরচালা গ্রামে গিয়ে কথা হয় সেই সময় রানির সান্নিধ্যে আসা বেশ কয়েক ব্যক্তির সঙ্গে। তাঁরা জানিয়েছেন, রানিকে গ্রামের মানুষেরা ‘ঘরের মানুষ’ হিসেবে আপন করে নিয়েছিলেন। তাই সেই ঘরের বাসিন্দা হিসেবে রুপার তৈরি প্রতীকী চাবি তুলে দেওয়া হয়েছিল দ্বিতীয় এলিজাবেথের হাতে। চাবি দিয়ে বলা হয়েছিল, তিনি এ গ্রামের প্রতিটি ঘরের মানুষ। যখন ইচ্ছা তিনি যেন এ গ্রামে ভ্রমণ করেন। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথও আবার এ গ্রামে ঘুরতে আসবেন বলে কথা দিয়েছিলেন।

‘আদর্শ ও স্বনির্ভর গ্রামের’ মডেল হিসেবে এই গ্রাম দেখতে এসেছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। আজ শুক্রবার গাজীপুরের শ্রীপুরের বৈরাগীরচালা গ্রামে
‘আদর্শ ও স্বনির্ভর গ্রামের’ মডেল হিসেবে এই গ্রাম দেখতে এসেছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। আজ শুক্রবার গাজীপুরের শ্রীপুরের বৈরাগীরচালা গ্রামে

সেদিনের স্মৃতি হাতরে বৃদ্ধা সালেহা বেগম বলেন, ‘সাদা দবদবা চেহারার একটা মানুষ আমরার গ্রামে আইসা উপস্থিত। আমরা তো সবাই ব্যাপক খুশি। রানি আইসা গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কতা কইছে। কেমনে পিঠা বানাইতে হয়, মুড়ি ভাজার পদ্ধতি; আরও অনেক কিছু নিজ চোখে দেখছেন তিনি। এগুলো দেইখা তো সে অবাক হয়ছে। সে তো আর এই সব তার দেশে দেখছে না। তার ঘোরাফেরা দেইখা মনে হইছিল, এইডা তারই গ্রাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘রানির মারা যাওয়ার খবর পাইছি। এরপর মনডা খারাপ হইয়া গেছে। খালি ভাবতাছি, ওনায় না কইছিল আবার আইব!’

রানির আগমন উপলক্ষে তখন গ্রামজুড়ে এক উৎসব শুরু হয়েছিল বলে জানালেন গ্রামের বাসিন্দা সাখাওয়াত হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা থেকে ট্রেনে চড়ে রানি শ্রীপুর রেলস্টেশনে নেমেছিলেন। গাড়িতে করে বৈরাগীরচালা চৌরাস্তায় আসেন। সেখান থেকে ৪০০ গজের মতো হেঁটে আসেন। সেখানে তাঁকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সংবর্ধনা শেষে তিনি বৈরাগীরচালা উচ্চবিদ্যালয়ে এসে অবস্থান নেন। এরপর সেখান থেকেই তিনি আদর্শ ও স্বনির্ভর গ্রামের মডেল হিসেবে বৈরাগীরচালা গ্রামের মানুষদের সাধারণ কার্যক্রমগুলো পরিদর্শন করেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button