অপরাধবিশেষ সংবাদসারাদেশ

মধুখালীতে শতাধিক নারীর ভি ডব্লিউবি কার্ডের চাল আত্মসাৎকারী নৌকার চেয়ারম্যান এখনো পরিষদে বহাল

মোঃ শরিফুল ইসলাম সেতু, মধুখালী উপজেলা প্রতিনিধি

ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার
কোড়কদি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুকুল হোসেন রিক্তের বিরুদ্ধে সম্প্রতি ভি ডাব্লুবি,ভিজিএফ,কাবিখা,কাবিটা,টিআর সহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।স্থানীয় জনগণ, সুবিধাভোগী সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হলো।

উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম:
স্থানীয় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থ যথাযথভাবে কাজে না লাগিয়ে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে রাস্তা নির্মাণ,সোলার লাইট বসানো ও পরিষদের উন্নয়ন,পরিষদের ডিজিটাল সেন্টার উন্নয়ন কাজগুলোতে বাজেটের তুলনায় কাজের মান অত্যন্ত নিম্নমানের। এছাড়াও কাজে না করে উত্তোলন করেছে প্রকল্পের টাকা,একই প্রকল্প একাধিকবার দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে।

চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে গন স্বাক্ষর:
ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর দাবি আমরা নিজেদের গ্রাম থেকে টাকা উঠায়ে নিজেদের চলাচলের জন্য যে রাস্তা করেছি মাটি দিয়ে, চেয়ারম্যান নকুল হোসেন সেই রাস্তা প্রকল্প দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছে,এটা সম্পূর্ণ জালজালিয়াতি আমরা এছাড়াও আমাদের গ্রামের অনেকেরই ভি ডাব্লিউবি কার্ডের চাল না দিয়ে তিনি আত্মসাৎ করেছেন। এ ব্যাপারে আমরা এলাকাবাসী সবাই গণ স্বাক্ষর করছি এবং এই ঘটনার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।

ভি ডাব্লিউবি ও ভিজিএফ বণ্টনে অনিয়ম:
ভি ডাব্লিউবি কার্ড ও ভিজিএফ বণ্টনে দুর্নীতি হয়েছে,দুঃস্থদের মাঝে ভি ডাব্লিউবি ও ভিজিএফ কার্ডের চাল সুবিধাভোগীদের না দিয়ে,চেয়ারম্যান আত্মসাৎ করেছে।ভুক্তভোগী তহমিনা,স্বামী মিরাজুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন আমার নামে যে কার্ড হইছে আমি জানতামই না ঈদের আগে চৌকিদার খবর দিলে আমি পরিষদে যাই তখন আমাকে পাঁচ বস্তা চাল দেন, ঈদের পরে আরো এক বস্তা চাল দেয়, আমি মোট ছয় বস্তা চাল পায়।পরবর্তী খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আমার নামে ভি ডাব্লিউবি কার্ড হয়েছিল।আমার মোট চাল পাওয়ার কথা ছিল-২৪ বস্তা আমি চাল পেয়েছি দুই বছরে মাত্র ৬ বস্তা।আমার বাকি ১৮ বস্তা চাল এই চেয়ারম্যান মুকুল আত্মসাৎ করে আমি এর সঠিক বিচার চাই। আমি গরিব মানুষ আমি সন্তানদেরকে নিয়ে খুব কষ্টে দিনযাপন করি এই চাল গুলো পেলে আমার সন্তানদেরকে নিয়ে ভালোমতো দুমুঠো ডাল ভাত খেতে পারতাম।এই আওমী লীগের চেয়ারম্যান মুকুল তা দেয়নি।

এছাড়াও কোড়কদি ইউনিয়নের প্রায় একশত ভি ডাব্লিউবি কার্ড ধারী ব্যক্তি বিগত দুই বছর কোন চাল পাইনি গত কুরবানির ঈদের সময় ট্যাগ অফিসার না থাকায় মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার উপস্থিতিতে চাল বিতরণ করা হয় কোড়কদি ইউনিয়ন পরিষদে।
উপায়ান্ত নাপেয়ে চেয়ারম্যান বাধ্য হয়ে ভি ডাব্লিউবি কার্ডধারী ব্যক্তিদেরকে চাল দেয়।কথায় আছে চোরের দশ দিন বাড়িওয়ালার একদিন। সুবিধাভোগীদের প্রশ্ন তাহলে আমরা কি কারনে এই পাঁচ বস্তা চাল পেলাম চেয়ারম্যানের এই শুভঙ্করের পাখির শিকার কমপক্ষে শতাধিক ব্যক্তি।

ভুক্তভোগীরা আরও বলেন এই চেয়ারম্যান যেকোনো কার্ড বিতরণে পক্ষপাতিত্ব করে, প্রকৃত উপকারভোগীদের পরিবর্তে আত্মীয়-স্বজন এবং ক্ষমতাসীন মহলের লোকজনের হাতে এসব কার্ড তুলে দেওয়া হয় বলে তারা জানান।

ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে অনিয়ম:
বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে ত্রাণ সামগ্রী সঠিকভাবে বিতরণ না করে বেশ কিছু মালামাল আত্মসাৎ করার অভিযোগও রয়েছে। স্থানীয় জনগণের দাবি
তালিকা প্রস্তুতিতে স্বচ্ছতা ছিল না এবং বিতরণেও বড় ধরনের অনিয়ম করেছে।

হাজিরা খাতায় জালিয়াতি:
ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন সভা ও প্রকল্প বাস্তবায়নে উপস্থিতি খাতায় জাল স্বাক্ষরের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলনের অভিযোগও পাওয়া গেছে।

ক্ষমতার অপব্যবহার ও শাসনহীনতা:
চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। জনপ্রতিনিধির আচরণে শাসনহীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগও উত্থাপিত হয়েছে।


স্থানীয়দের বক্তব্য:
অনেক স্থানীয় বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন আমরা আগে ভেবেছিলাম উনি আমাদের ভালো করবেন, কিন্তু এখন দেখছি উনি নিজেই সবচেয়ে বড় অনিয়মকারী। ত্রাণ, রাস্তা, এমনকি সরকারি সাহায্যেও দুর্নীতি করছেন।

আরেকজন বলেন,ভোটে জেতার পর থেকেই উনার স্বভাব পাল্টে গেছে। নিজের লোক ছাড়া কাউকে ত্রাণ বা সুযোগ-সুবিধা দেন না।

চেয়ারম্যানের অবস্থান:
এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান মুকুল হোসেন রিক্তর ভাই বলেন,৫ ই আগস্টের পর থেকে মুকুল বেশিরভাগ সময় ঢাকায় রয়েছে আমাদের আরো কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ঢাকায় সে দেখাশোনা করে এবং রাজনৈতিক কারণে এলাকায় কিছু সমস্যায় চেয়ারম্যান এলাকার বাইরে আছেন।

চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, তা অত্যন্ত গুরুতর। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে স্থানীয় জনগণ। যদি তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়, তবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button